“অবসর নিয়ে ভালো করেছে”কেন বি’স্ফোরক মন্তব্য করলেন আশরাফুল?কারণ জেনে গর্ব সারা দেশের!

হাবিবুল বাশার স্তম্ভিত৷ বাংলাদেশ উদীয়মান দলের ম্যনেজারের দায়িত্ব পালন করতে এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় আছেন, চোখ রাখছিলেন জাতীয় দলের কার্যক্রমে৷ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের পাশাপাশি একজন জাতীয় নির্বাচকও তিনি৷সিরিজের মাঝ পথে তামিম ইকবাল এমন একটা ঘোষণা দিয়েছেন জানাতেই কিছুক্ষণ তিনি শব্দহীন৷ অনেকটা সময় আবেগকে ধরে রেখে শুধু একটা বাক্যই উচ্চারণ করতে পারলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তামিম৷’চোখের কোণও কী একটু ভিজে উঠেছিলো তার? তামিমের কাছে তিনি তো শুধু জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বা নিছকই একজন জাতীয় নির্বাচক নন৷ জাতীয় দলে তামিমের প্রথম অধিনায়কও ছিলেন তিনি৷

আজকের দিনটা শুধু তামিমের চোখের জলে বিদায় বলে দেওয়ার দিন নয়৷ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরো অসংখ্য মানুষের জন্যই এই দিনটা আবেগের৷ মাঠে, মাঠের বাইরে তামিমের অবসর ঘোষণা প্রায় সবার জন্যই একটা বিরাট ধাক্কা৷ সংবাদ সম্মেলনে যখন এলেন চোখ অনেকটা লালচে। বোঝাই যাচ্ছিলো, অনেকটা সময় কান্নাকাটি করেছেন৷ হয়তো একাই৷শুরুতে বেলা ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে আসবেন বলেছিলেন৷ এলেন আরো ঘণ্টা দেড়েক পর৷ হয়তো এই সময়টায় নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করেছেন৷ কখনো বা নিজেকে প্রবোধ দিয়েছেন৷ নিজের সিদ্ধান্ত নিজে কাঁটাছেড়া করেছেন৷ তার হাতে তো একাধিক অপশন ছিলো৷ চাইলে শুধু জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে পারতেন৷ কিংবা ওয়ানডে ছেড়ে দিয়ে আরো কিছুদিন টেস্ট চালিয়ে যাওয়া কথা বলতে পারতেন৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে একেবারেই বিদায় বলে দেয়া ছিলো চরমতম সিদ্ধান্ত৷ তামিম সেটাই বেছে নিয়েছেন৷

বিসিবি সভাপতি তামিমের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করেছেন৷ তা তিনি করতেই পারেন৷ তবে বিসিবির ঠিক কোথায় কোথায় পেশাদারিত্ব আছে সেই প্রশ্নে তার নিশ্চুপ থাকা ভিন্ন কোনো উপায় কী আছে৷ জাতীয় দল নিয়ে তার অতিকথন আগেও সমালোচিত হয়েছে৷ এখনতো এটা বাংলাদেশকে এটা একটা বিরাট ক্ষতির মুখেই ঠেলে দিয়েছে৷সিরিজে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে৷ আজ ছিল ভুল ভ্রান্তি খুঁজে বের করার দিন৷ কিন্তু সেটা না করে এখন পরের ম্যাচের জন্য অধিনায়ক খুঁজতে হচ্ছে৷ সামনে আরো বড় ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে দল নিশ্চিতভাবেই৷টানা প্রায় ১৭ বছর ওয়ানডে দলে খেলছেন তামিম৷ ইনজুরি ছাড়া এক ম্যাচের জন্যও দল থেকে বাড় পড়েননি৷ বাংলাদেশে এই রেকর্ড আর কোনো খেলোয়াড়ের নেই৷ এমনকি সাকিব, মাশরাফিরও নেই৷ ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাদেরও বাদ পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে, কিন্তু তামিমের কখনো এই অভিজ্ঞতা হয়নি৷একটা ক্রিকেট বোর্ডে পেশাদারত্বের সামগ্রিক ঘাটতি থাকেলেই কেবল দল এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে পারে৷ চাইলে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিকেও এজন্য দায়ী করা যায় অনায়েসেই৷

নিজেদের ক্যারিয়ারে কখন থামতে হবে বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারের সেই পরিকল্পনা থাকে না৷ যদিও বা কারো সেই পরিকল্পনা থাকেও সবাই মিলে পরিস্থিতি এমন করে তোলেন যে মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার প্রায় কারো সুযোগ থাকে না৷ ইংল্যান্ড থেকে ফোন করেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ তামিমের সিদ্ধান্তে হাবিবুল বাশারের মতো তিনিও বিস্মিত৷ তবে এবার তাকে এতটা আবেগ তাড়িত মনে হয়নি৷ অনেকটা উদাস স্বরে বললেন, ভালোই করেছে তামিম৷ চারদিক থেকে ন্যায্য, অন্যায্য এত সমালোচনা হচ্ছিলো যে তার এ থেকে বাঁচার জন্য এর চেয়ে ভালো কিছুতো হাতে ছিলোও না৷ আশরাফুলের কণ্ঠেও বিষণ্ণতার সুর৷ তামিম তবুও বিদায় বলার সুযোগ পেয়েছেন৷ আশরাফুল তো সেই সুযোগও পাননি৷ যতই তাকে ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্ক ঘিরে থাকুক, বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রথম সুপারস্টার তো তিনি৷কিন্তু বাংলাদেশ আর কবে কাকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় দিয়েছে৷ কান্নাই বাংলাদেশের সব তারকার শেষ পরিণতি৷ তামিম তা-ও ভাগ্যবান৷ নিজেরে শহরে, স্মৃতির চট্টগ্রামে বিদায় বলতে পেরেছেন৷ আশরাফুল, হাবিবুল বাশারদের যতো কান্না, আবেগ সব অন্ধকারে মিশে গেছে৷